WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার উপায় ও তার গুরুত্ব

স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার উপায় ও তার গুরুত্ব

আমরা আজকের কৃষি টিপস এ আলোচনা করবো স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার উপায় ও তার গুরুত্ব নিয়ে। অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন করে থাকেন কীভাবে স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনা যায়। আর্টিকেল টি সবাই পড়বেন এবং শেয়ার করে দিবেন অন্য কৃষি উদ্যোক্তা বন্ধুদের কাছে।

স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার উপায় ও তার গুরুত্ব বিস্তারিত

পেঁপে চাষ বাংলাদেশের কৃষি জীবনে একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় ক্ষেত্র। তবে পেঁপে চাষে সফলতা অর্জনের জন্য সঠিক বীজ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে, স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনা ও বাছাই করা একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া যা ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অপরিহার্য।

পেঁপে গাছের লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য ও তার প্রভাব

পেঁপে গাছ মূলত তিন ধরনের হয়: পুরুষ, স্ত্রী এবং উভয়লিঙ্গ। পুরুষ গাছ থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না, তবে পরাগায়নের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

পুরুষ পেঁপে গাছ

উভয়লিঙ্গ গাছ নিজে নিজেই ফল ধারণ করতে পারে, কিন্তু স্ত্রী গাছের ফল সাধারণত বাজারে বেশি চাহিদা সম্পন্ন। স্ত্রী গাছ থেকে পাওয়া ফল বড় ও মানসম্পন্ন হয়, যা বাণিজ্যিক চাষে অধিক লাভজনক।

স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার পদ্ধতি

স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার জন্য প্রথমে একটি পাকা পেঁপে নির্বাচন করুন যা লম্বাটে আকৃতির হবে। পেঁপে কাটার সময় যে অংশ সরু হয়ে গেছে, সেই অংশ বাদ দিয়ে দিন কারণ সেখান থেকে ভালো মানের বীজ পাওয়া যায় না। এরপর পেঁপের মোটা অংশ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।

আরও পড়ুন   এটেল মাটিতে কোন ফসল ভালো হয় সঠিক চাষ পদ্ধতি ও পরামর্শ
স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার পদ্ধতি
স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনার পদ্ধতি

বীজগুলো যত্ন সহকারে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, দুই ধরনের বীজ রয়েছে: কালো ও ধূসর। কালো ও ছোট বীজগুলো স্ত্রী বীজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং ধূসর বা সাদা বীজগুলো পুরুষ বীজ।

বীজ পরিষ্কার ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া

সংগ্রহ করা কালো বীজগুলোকে পানিতে ধুয়ে নিন। পানিতে ভাসমান বীজগুলি অকেজো হতে পারে, তাই যে বীজগুলি পানির নিচে ডুবে যায় সেগুলোই ভালো মানের। এই বীজগুলোকে নিম জলে ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন।

স্ত্রী পেঁপে চারা তৈরি ও যত্ন

সংগ্রহ করা স্ত্রী বীজ থেকে চারা তৈরির জন্য, বীজগুলোকে উর্বর মাটিতে বপন করুন। চারা গজানোর পর নিয়মিত পানি দেওয়া এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক নিশ্চিত করুন। পেঁপে গাছের যত্নে নিয়মিত সার প্রয়োগ এবং রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকুন।

পরাগায়ন ও ফলন বৃদ্ধি

যদিও স্ত্রী গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়, তবুও পরাগায়নের জন্য কিছু পুরুষ গাছ রাখা প্রয়োজন। প্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য অন্তত একটি পুরুষ গাছ রাখুন। এতে করে ফলন বৃদ্ধি পাবে এবং ফলের মান ভালো হবে।

সঠিক পদ্ধতিতে স্ত্রী পেঁপে বীজ চেনা ও চাষ করা গেলে, আপনার পেঁপে চাষ অবশ্যই সফল হবে। এই প্রক্রিয়া মেনে চললে, আপনি নিশ্চিত ভাবে উন্নত মানের ফল পাবেন যা আপনার চাষাবাদের প্রয়াসকে সার্থক করবে।

পেঁপের চারা স্ত্রী না পুরুষ কিভাবে বুঝবো?

পেঁপের চারা স্ত্রী না পুরুষ চিনতে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যায়:

১. ফুল দেখে চিনতে পারবেন: স্ত্রী পেঁপে গাছে ফুল ফোটে কিন্তু পুরুষ পেঁপে গাছে ফুল ফোটে না। স্ত্রী পেঁপের ফুলের মাঝখানে একটি ছোট্ট গর্ত থাকে যেখানে বীজ ধারণ করে। অন্যদিকে পুরুষ পেঁপে গাছে শুধু পাতা থাকে।

২. ফল দেখে চিনতে পারবেন: শুধুমাত্র স্ত্রী পেঁপে গাছেই ফল ধারণ করতে পারে। পুরুষ পেঁপে গাছে কোনোদিন ফল থাকবে না।

আরও পড়ুন   অল্প পুঁজিতে দেশী জাতের গরু দিয়ে লাভজনক খামার

৩. পুরুষ ও স্ত্রী মালা আলাদা: স্ত্রী পেঁপে গাছের মালাটি সাধারণত লম্বা এবং মোটা আর পুরুষ পেঁপের মালা সাধারণত ছোট থাকে।

৪. বয়স দেখে চিনতে পারবেন: প্রথম বছরেই স্ত্রী ও পুরুষ গাছ আলাদা করা যায়। স্ত্রী গাছের গড়ন ও শিকড় ব্যবস্থা ভারী ও প্রশস্ত হয়।

তাই, সচরাচর ফুল, ফল এবং মালার আকৃতি ও বয়স দেখেই গাছটি স্ত্রী না পুরুষ তা বোঝা যায়। নার্সারি থেকে চারা কিনলে তারাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে স্ত্রী/পুরুষ চিহ্নিত করে থাকে।

কিভাবে স্ত্রী পেঁপের বীজ নির্বাচন করতে হয়?

স্ত্রী পেঁপের বীজ নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়:

১. ফলের আকার ও আকৃতি: স্বাস্থ্যকর ফল থেকে বীজ নিতে হবে। ফলটি যেন আকারে বড়ো, আকৃতিতে সুন্দর ও সুষম হয়। খর্বাকৃতি বা আঘাতপ্রাপ্ত ফল থেকে বীজ নেওয়া উচিত নয়।

২. ফলের রং: পাকা ও সম্পূর্ণ পরিণত ফল থেকে বীজ নিতে হবে। পেঁপের রং যেন হলদেটে সবুজ বা লাল হয়। অপরিণত হলুদ বা কাঁচা পাকা ফল থেকে বীজ নেওয়া যাবে না।

৩. ফলের ওজন: ভারী ও গুরুত্বপূর্ণ ফল থেকে বীজ নিতে হবে। হালকা ফল থেকে বীজ গ্রহণ করা উচিত নয়।

৪. ফলের দৃঢ়তা: শক্ত ও দৃঢ় ফল থেকে বীজ নিতে হবে। নরম বা পচা ফলের বীজ গ্রহণযোগ্য নয়।

৫. গাছের বয়স: প্রায় ৫-৭ বছর বয়সী স্বাস্থ্যবান স্ত্রী পেঁপে গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। খুব বয়স্ক বা বাচ্চা গাছের ফল এড়িয়ে যেতে হবে।

৬. বীজের আকার ও গঠন: বড়, দৃঢ়, গোলাকার ও নিখুঁত বীজগুলো বাছাই করতে হবে। খর্বাকৃতি, ক্ষতযুক্ত বা অসম্পূর্ণ বীজ গ্রহণযোগ্য নয়।

এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে স্বাস্থ্যকর ও বলিষ্ঠ পেঁপে গাছ থেকে সতর্কতার সাথে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এতে ভবিষ্যতে সুস্থ ও ফলনশীল চারা পাওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন   ডাটা শাক চাষ পদ্ধতি সহজ ও লাভজনক পদ্ধতি

 

লেখক পরিচিতি

Iqbal Hossain Shimul
Iqbal Hossain Shimul
আমি ইকবাল হোসেন শিমুল একজন ফ্রিল্যান্স ব্লগার আর্টিকেল রাইটার। আর্টিকেল রাইটিং এবং এস ই ও এর উপর কাজ করছি প্রায় ১০ বছর যাবত।
WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now