অল্প পুঁজিতে দেশী জাতের গরু দিয়ে লাভজনক খামার

অল্প পুঁজিতে দেশী জাতের গরু দিয়ে লাভজনক খামার

আমাদের আজকের কৃষি টিপস হচ্ছে অল্প পুঁজিতে দেশী জাতের গরু দিয়ে লাভজনক খামার করে কীভাবে আপনি লাভবান হবেন তার উপরে। পুরো আর্টিকেল টি পড়ে ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন অন্য বন্ধুদের মাঝে।

অল্প পুঁজিতে দেশী জাতের গরু খামার বিস্তারিত

গরুর খামার ব্যবসা হলো এমন একটি উদ্যোগ যেখানে অল্প পুঁজিতে বিশাল লাভের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যারা নতুন এবং তরুণ উদ্যোক্তা, তারা গরু পালনে খুব উৎসাহী এবং গরুর খামার ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। এই প্রকল্পটি হতে পারে প্রারম্ভিক অথবা বিশেষায়িত লাভজনক একটি প্রকল্প।

গ্রামে যাদের কৃষি জমি আছে এবং যারা পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের যোগান দিতে পারেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ব্যবসা হতে পারে। আসুন দেখি কিভাবে আপনি দেশী জাতের গরু দিয়ে অল্প পুঁজিতে লাভজনক খামার ব্যবসা করতে পারেন।

খামারের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি

গাভী ক্রয় এবং সংরক্ষণ

প্রথমেই আপনাকে ৪ থেকে ৫ টি দেশী গাভী কিনতে হবে যেগুলি ৩ থেকে ৪ লিটার দুধ দেয়। প্রতিটি গাভীর ক্রয়মূল্য হবে সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ হাজার টাকার মধ্যে। গাভীগুলি ২/৪/৬ দাঁত বয়সের হতে হবে। একটি মজবুত গোয়ালঘর বা শেড তৈরি করতে হবে যার খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এই শেডে ৪ থেকে ৫ টি দেশী গাভী রাখা যাবে।

আরও পড়ুন   লাভজনক কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

খাদ্য সরবরাহ

খাদ্য সরবরাহ
খাদ্য সরবরাহ

গাভীর খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দৈনিক ২ কেজি দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘাস এবং খড় দেওয়া জরুরি যা নিজস্ব কৃষি জমি থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে অথবা ১ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে নেওয়া যেতে পারে।

পুঁজি এবং খরচের হিসাব

পুঁজি নির্ধারণ

খামার ব্যবসার জন্য প্রাথমিক পুঁজি নির্ধারণ করতে হবে। নিচে একটি হিসাব দেওয়া হলো:

৪ টি বাছুর সহ দেশী গাভীর ক্রয়মূল্য: ৪ x ৪৫০০০ = ১৮০০০০ টাকা।
১টি গোয়ালঘর তৈরির খরচ: ৫০০০০ টাকা।
গরুর খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক খরচ: ২০০০০ টাকা।
মোট পুঁজি: ২৫০০০০ টাকা।

আয় নির্ধারণ

৪ টি গরু গড়ে ৩ লিটার দুধ দিলে মোট ১২ লিটার দুধ পাওয়া যাবে। প্রতিদিন ১২ লিটার দুধ বিক্রয় মূল্য ৪০ টাকা প্রতি লিটার হিসেবে,

১২ x ৪০ = ৪৮০ টাকা।
তাহলে দৈনিক আয় হচ্ছে ৪৮০ টাকা।

ব্যয় নির্ধারণ

৪ টি গাভীর জন্য দৈনিক ৮ কেজি দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হবে যার প্রতি কেজির মূল্য ২৫ টাকা।

৮ x ২৫ = ২০০ টাকা।
দুধ দোয়ানোর জন্য গোয়ালার পারিশ্রমিক: ৭০ টাকা।
মোট ব্যয়: ২০০ + ৭০ = ২৭০ টাকা।

নিট আয়

দৈনিক নিট আয়: ৪৮০ – ২৭০ = ২১০ টাকা।
মাসিক নিট আয়: ২১০ x ৩০ = ৬৩০০ টাকা।

গাভীর যত্ন এবং পুনরুৎপাদন

গাভীর স্বাস্থ্যবিধি

গাভীগুলির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত চিকিৎসা এবং পরিচর্যা জরুরি। গাভীগুলি যাতে নিয়মিত বিয়ানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাভী সঠিক সময়ে গরম হলে দুই মাসের মধ্যে আবার গাভীন হতে পারে।

খাদ্য এবং বীজ

গাভীর খাদ্য হিসাবে ১০০% শাহীওয়াল, ১০০% ব্রাহমা এবং শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান সিমেন ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজের মান ভালো হলে গাভীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

খামার সম্প্রসারণ এবং বাছুর বিক্রি

বাছুর বিক্রি

বাছুর বিক্রি
বাছুর বিক্রি

একবছর গাভী থেকে আয় দিয়ে যদি খামার চালিয়ে নিতে পারেন, তাহলে বছর শেষে বাছুর বিক্রি করেই আপনি পুঁজির একটা বড় অংশ তুলে আনতে পারেন। বাছুর বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে খামারটি আরো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন   ঘরে মাশরুম চাষ পদ্ধতি,সম্পূর্ণ গাইড

খামার সম্প্রসারণ

প্রতিমাসের আয়ের অর্ধেক রেখে দিতে হবে ড্রাই পিরিওডে গাভীর খাদ্য খরচ যোগান দেওয়ার জন্য। বাছুর বিক্রির অর্থ দিয়ে আরো গাভী কিনে খামার সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

সাফল্যের সম্ভাবনা

গ্রাম কেন্দ্রিক নতুন গরুর খামার যারা করতে চান তারা যদি এভাবে শুরু করেন, তাহলে তারা শতভাগ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ খামারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন।

উপসংহার

খামার ব্যবসা শুরু করার জন্য উপরের হিসাব এবং নির্দেশনাগুলি একটি বাস্তবসম্মত দিক নির্দেশনা প্রদান করে। আশা করি এই গাইডলাইন অনুসরণ করে আপনি লাভজনক গরুর খামার ব্যবসা করতে পারবেন।

যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আপনার কোনো বিশেষ দিক নির্দেশনার প্রয়োজন হয়, তাহলে কমেন্টে শেয়ার করতে পারেন। পোস্টটি আরও সমৃদ্ধ করতে আপনার মতামত শেয়ার করতে ভুলবেন না!

লেখক পরিচিতি

Iqbal Hossain Shimul
Iqbal Hossain Shimul
আমি ইকবাল হোসেন শিমুল একজন ফ্রিল্যান্স ব্লগার আর্টিকেল রাইটার। আর্টিকেল রাইটিং এবং এস ই ও এর উপর কাজ করছি প্রায় ১০ বছর যাবত।
পোস্ট টি শেয়ার করে দিন